প্রকাশিত: ০৯:৫২ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৬১২ রানের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালো নিউজিল্যান্ড
লাহোরের আলো ঝলমলে সন্ধ্যায় নিউজিল্যান্ড দেখাল ধৈর্য, দক্ষতা আর আত্মবিশ্বাসের নিখুঁত মিশেল। কেন উইলিয়ামসনের রাজকীয় সেঞ্চুরিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পাকা করল কিউইরা। অপরদিকে, ম্যাথু বৃটজকে তার অভিষেক ম্যাচেই ১৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেও দলের হার ঠেকাতে পারলেন না।
নতুন তারকা উদিত হলো ক্রিকেট আকাশে! অভিষেক ম্যাচেই ইতিহাস গড়ে ফেললেন ম্যাথু বৃটজকে। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেমেই করলেন ১৫০ রান—যা ওয়ানডে ইতিহাসে কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ অভিষেক স্কোর! কিন্তু তার এই কীর্তি রয়ে গেল একা। ব্যাট হাতে একাই লড়লেন, কিন্তু প্রোটিয়াদের মিডল অর্ডার যেন থমকে গেল।
দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের গল্পটা ছিল ধীরগতির। টেম্বা বাভুমা শুরুতে কিছুটা ঝলক দেখালেও (২৩ বলে ২০), উইল ও'রউর্কের শর্ট বলের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন। এরপর বৃটজকে ও জেসন স্মিথ ৯৩ রানের জুটি গড়লেও, গতি বাড়াতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে ৩০০ রান ছোঁয়ার পথটা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে বৃটজকে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ের পর শেষ ১৯ বলে ৫০ রান তুলে ঝড় তুললেন! ৪১তম ওভারে ১২৮ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর গতি বাড়িয়ে পরের ৫০ করলেন মাত্র ১৯ বলে। কিন্তু ১৫০ রান ছুঁয়ে যখন ডাবল সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন ম্যাট হেনরির একটি ধোঁকা দেওয়া স্লোয়ার বলে ধরা পড়লেন মিড-অফে। শেষ দিকে ওয়িয়ান মুলডার (৬৪) কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকা থেমে যায় ৩০৪ রানে।
৩০৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ধীরস্থির শুরু করলেও আত্মবিশ্বাস ছিল দৃঢ়। উইল ইয়ং ১৯ রানে ফিরে গেলে মাঠে নামেন দু’জন পরীক্ষিত যোদ্ধা—কেন উইলিয়ামসন ও ডেভন কনওয়ে। বিশ্বকাপের পর প্রথমবারের মতো একসঙ্গে নেমে যেন ছন্দ খুঁজে পেলেন দু’জন।
কনওয়ে ৬৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করলেও মূল আকর্ষণ ছিল উইলিয়ামসনের ব্যাটিং। প্রথম দিকে ধীরস্থির থাকলেও ৪৪ বলে ফিফটি করার পর পুরোপুরি বদলে গেলেন! তার ব্যাটে ছিল শিল্পের ছোঁয়া—কখনো কভার ড্রাইভ, কখনো স্কয়ার কাট, কখনো স্ট্রেইট ড্রাইভ। বিশেষ করে এনগিডির শর্ট বলগুলোকে নিখুঁতভাবে পুল করে উইলিয়ামসন বুঝিয়ে দিলেন, তিনি এখনো অপ্রতিরোধ্য।
৩৪তম ওভারে এক রান নিয়ে যখন নিজের শতক পূর্ণ করলেন, লাহোরের গ্যালারিতে তখন করতালির ঝড়! পাকিস্তানিদের মধ্যেও যেন উইলিয়ামসনের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়ে গেছে।
কনওয়ে যখন ৯৭ রানে কাটা পড়লেন, তখন ম্যাচ পুরোপুরি কিউইদের দখলে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ চেষ্টা চালিয়েছিল, মুথুসামির বলে ড্যারিল মিচেল ও টম লাথাম পরপর ফিরলেন। তবে উইলিয়ামসনের সঙ্গে থাকা গ্লেন ফিলিপস নিশ্চিত করলেন, জয়টা আর হাতছাড়া হবে না।
৪৯তম ওভারের প্রথম বলেই উইলিয়ামসন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করলেন, এক হাতে ব্যাট উঁচিয়ে অভিবাদন গ্রহণ করলেন দর্শকদের কাছ থেকে। ১৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে তিনি প্রমাণ করলেন, কেন তিনি এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার।
এই জয়ে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান ত্রি-দেশীয় সিরিজের ফাইনালে পৌঁছে গেল। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে এখন কঠিন পরীক্ষা—বেঁচে থাকতে হলে করাচিতে পাকিস্তানকে হারাতেই হবে।
বৃটজকের রেকর্ড ইনিংস হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এক সান্ত্বনা, কিন্তু দলীয় পারফরম্যান্সের ঘাটতি তাদের মাথাব্যথার কারণ। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের জন্য এটি শুধু একটি জয় নয়, বরং তাদের ব্যাটিং শক্তিমত্তার একটি চূড়ান্ত প্রদর্শনী!
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪