প্রকাশিত: ০৯:৪১ ৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আন্দোলন নিয়ে অবিশ্বাস্য মন্তব্য করে আলোচনার ঝড় তুললেন তারেক জিয়া
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরিক রহমান বলেছেন যে, বাংলাদেশের অটোক্রেটিক শাসনের পতন শুধু বিএনপির আন্দোলনের ফলস্বরূপ ছিল না। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এটি ছিল সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে।
শনিবার ফারিদপুর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি ও জনগণের সম্পৃক্ততা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখার সময় তরিক রহমান এই বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন যে, ২ বছর আগে বিএনপি ২৭ দফা সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেছিল এবং তারা আশাবাদী ছিল যে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার পতন ঘটবে, যদিও এর নির্দিষ্ট সময় তারা জানতো না। তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমাদের ৩১ দফা কর্মসূচি সফল হবে যখন আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে পারব। তাই ৩১ দফা কর্মসূচি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।”
কর্মশালার সেশনের ৫:০৩ পিএম থেকে ৫:২৩ পিএম পর্যন্ত সময়কালে তরিক রহমান জনগণের বিশ্বাস অর্জন ও রক্ষা করার গুরুত্ব উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস অর্জন, রক্ষা এবং বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের একযোগভাবে কাজ করতে হবে। যে কেউ, যেই অবস্থানেই থাকুক, তাকে বিএনপি ও এর মূল্যবোধের একজন প্রতিনিধির মতো কাজ করতে হবে।”
তরিক রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের কার্যকর থাকতে এবং নিষ্ক্রিয়তা পরিহার করার আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদি আমরা নিষ্ক্রিয় থাকি, তাহলে কোনো কাজ হবে না। আমাদের এমন কোনো ভুল করা উচিত নয়, যা আমাদের জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, যা আমাদের ক্ষতি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি জনগণ না জানে, বিএনপি তাদের জন্য কি করতে চায়—বিশেষ করে ছাত্র, নারী, কৃষক এবং শ্রমিকদের জন্য, তাহলে দলটি তাদের সমর্থন হারাবে। যদি জনগণ না জানে আমরা তাদের জন্য কি করতে চাই, তাহলে আমরা তাদের বিশ্বাস ধরে রাখতে পারব না।”
তরিক রহমান এটাও জানান যে, দলটি হয়তো তার সব লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না এখনই, তবে তিনি ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন। তিনি জনগণের সমর্থন ছাড়া এই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন এবং সকল স্তরের সরকারী প্রতিনিধিদের জন্য জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। “আমরা শুধু প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের জন্য নয়, বরং মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় নেতাদের জন্যও জবাবদিহিতা দাবি করি,” বলেন তিনি। তিনি শেখ হাসিনার শাসনকালে জবাবদিহিতার অভাবের কারণে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন, যেমন ফারিদপুর থেকে ২০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।
তরিক রহমান আরও বলেন, “আমাদের এমন একটি সমাজ তৈরি করতে হবে, যেখানে জনগণ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য না হয়, যেখানে ছাত্ররা তাদের পড়াশোনা শেষে চাকরি পায়, এবং কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়। যেমন আমরা একত্রিত হয়ে স্বৈরাচার পতন করেছি, তেমনি আমাদের একত্রিত হয়ে সমাজে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
ফারিদপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, যিনি সেশনের সভাপতিত্ব করেন, ৩১ দফা কর্মসূচিকে শেখ হাসিনার সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি জবাব হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, "এটি একটি মানবিক, স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রূপরেখা।"
কর্মশালায় প্রধান বক্তা ছিলেন ৩১ দফা সংস্কার কমিটির সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, এবং তরিক রহমানের উপদেষ্টা ড. মেহেবী আমিনও উপস্থিত ছিলেন।
এদিনের কর্মশালায় ফারিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলা থেকে বিএনপির নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এই সেশনে জেলা নেতৃবৃন্দ তরিক রহমানের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং তিনি সেগুলোর সরাসরি উত্তর দেন।
এই কর্মশালা বিএনপির রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কারের পথে একত্রিত প্রচেষ্টা, জনগণের সম্পৃক্ততা এবং জবাবদিহিতার গুরুত্বকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪