প্রকাশিত: ১১:৫৯ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
![](https://admin.allnewsbd24.com/uploads/News/0c697df6-a159-4c24-afdd-7bac99d9b78e__.jpg)
শাবান মাসের ফজিলত: রহমত, বরকত ও প্রস্তুতির মাস
হিজরি ক্যালেন্ডারে রমজান মাসের আগের মাস শাবান, যা মুসলিম জাতির জন্য এক বিশেষ স্থান অধিকার করে। শাবান, একটি এমন মাস, যেখানে রোজা, দোয়া এবং ইবাদত পালন করা আল্লাহর কাছে এক বিশেষ সুযোগ হিসেবে বিবেচিত। এটি রমজানের আগমনের জন্য প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন মুসলিমরা ইবাদতের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করে তোলেন এক মহিমান্বিত মাসের জন্য।
শাবান মাসের তাৎপর্য
শাবান মাসের রহমত ও বরকত সম্পর্কে মহানবী (সা.) আমাদেরকে বহু শিক্ষা দিয়েছেন। বিশেষত, এই মাসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং আত্মশুদ্ধির সুযোগ রয়েছে। হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে নিজ সৃষ্টির কাছে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
মহানবী (সা.)-এর আমল
মহানবী (সা.) নিজেই শাবান মাসে বিশেষ যত্নের সাথে ইবাদত পালন করতেন। এই মাসে তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ছিল, যা মুসলিম উম্মতের জন্য শিক্ষণীয়:
মধ্য শাবানের রাত: ক্ষমার রাত্রি
শাবান মাসের মধ্যরাতটি আল্লাহর রহমতের বিশেষ সময়, যখন সৃষ্টির সব পাপের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। মহানবী (সা.) এই সময়টিকে ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে বেছে নিতেন। তিনি বলতেন, "এ রাতেই আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কাছে ক্ষমা করেন, তাই আমিও চাই আমার আমলনামা রোজা রাখার সময় আল্লাহর কাছে পৌঁছুক।" (সুনানে নাসায়ী)
রোজার গুরুত্ব
শাবান মাসে রোজা রাখা মহানবী (সা.)-এর প্রিয় আমল ছিল। তিনি বলতেন, "যদি তুমি শাবানে রোজা না রাখো, তবে রমজানের আগে এক বা দুই দিন রোজা রাখো, যেন তোমার আমল আল্লাহর কাছে পবিত্র থাকে।" (আবু দাউদ)
বরকতের দোয়া
মহানবী (সা.) শাবান মাসে রজব এবং শাবান মাসের বরকত লাভের জন্য দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, "হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দাও এবং আমাদের রমজানে পৌঁছানোর সৌভাগ্য দাও।"
হিসাবের গুরুত্ব
মহানবী (সা.) শাবান মাসে নিজের আমল হিসাব সংরক্ষণ করতেন। তিনি কখনো শাবান মাসের শেষ দিনে রোজা রাখতে ভুলতেন না, আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করতেন। (সুনানে আবি দাউদ)
কেন শাবান মাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত?
শাবান মাসের প্রতি মহানবী (সা.)-এর এত মনোযোগ এবং যত্নের পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
আমলনামার উত্তোলন
শাবান মাসে সবার আমলনামা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। মহানবী (সা.) এসময় রোজা রাখতেন, যেন তাঁর আমলনামা আল্লাহর কাছে উত্তোলিত হয় এক পবিত্র অবস্থায়।
উদাসীনতা কাটানো
শাবান মাস একটি মধ্যবর্তী মাস, যখন মানুষের মধ্যে ইবাদতের প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি হয়। রজব হারাম মাস এবং রমজান ইবাদতপূর্ণ মাস—এই মাঝে শাবান মাসটিকে অবহেলা করা হয়। মহানবী (সা.) তাই এ মাসে অধিক ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে রমজানের জন্য প্রস্তুতি নেয়া যায়।
রমজানের প্রস্তুতি
শাবান মাসের অধিক ইবাদতের মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজেকে রমজান মাসের জন্য প্রস্তুত করে। এটি একটি সুযোগ, যাতে রমজান আসার আগে নিজেকে শুদ্ধ করে নেওয়া যায় এবং পবিত্র রমজান মাসে সঠিকভাবে ইবাদত করা সম্ভব হয়।
শাবান মাস আমাদের জন্য এক অমূল্য উপহার। এটি ইবাদতের মাস, ক্ষমা প্রার্থনার মাস, বরকত লাভের মাস। মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করে আমাদের উচিত এই মাসে অতিরিক্ত ইবাদত ও দোয়া করা, যাতে আমরা রমজান মাসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শাবান মাসের পূর্ণ বরকত লাভের সুযোগ দিন এবং রমজান মাসে সঠিকভাবে ইবাদত করার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪