প্রকাশিত: ১২:৩৯ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা: চিকিৎসকের দৃষ্টিতে সঠিক খাবার ও ইনসুলিন সমন্বয়
রমজান মাসের পবিত্রতা ও সাদাকে সঙ্গে নিয়ে আসে এক বিশেষ সময়, যখন মুসলিমরা রোজা রাখেন, কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে, সঠিক প্রস্তুতি, চিকিৎসকের পরামর্শ এবং কিছু সঠিক নিয়ম মেনে রোজা রাখলে এটি পুরোপুরি নিরাপদ হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন, যাতে তারা খাবার, ওষুধ এবং ইনসুলিনের সঠিক সমন্বয় করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে, রোজা রাখার প্রস্তুতি আগেই নফল রোজা রেখে নেওয়া উচিত, যাতে শরীর রোজা রাখার জন্য প্রস্তুত থাকে।
গত রোববার এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আয়োজক ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট ইন বাংলাদেশ (এসেডবি)। বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখার সময় রক্তে শর্করার (সুগার) মাত্রা পরীক্ষা করেন না, যা তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলেন, রোজা রাখার সময় ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা না করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (শর্করার স্বল্পতা), হাইপারগ্লাইসেমিয়া (শর্করার আধিক্য), কিটোএসিডোসিস এবং পানিশূন্যতার মতো মারাত্মক জটিলতায় পড়তে পারেন। তবে, যদি তারা কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলেন, তবে এসব জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
ডায়াবেটিস রোগীদের বিশেষ করে সাহ্রি না খেয়ে রোজা রাখার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যাদের অতিরিক্ত ওজন রয়েছে, তাদের জন্য ইফতারের পর হালকা ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইফতারে ১-২টি খেজুর খেয়ে কিছু সময় বিরতি দিয়ে তারপর ফল, সবজির স্যুপ খেতে হবে। সাহ্রিতে আমিষজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে এবং ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা আমাদের দায়িত্ব। তাদের সঠিক পরামর্শ এবং প্রস্তুতি নিয়ে রোজা রাখলে তারা সুস্থ থাকতে পারবেন।” এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন পরিচালক মোহাম্মদ রোবেদ আমিন জানান, সরকার ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ইনসুলিন বিতরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা আরও বলেন, রমজান মাসে রোজা রাখার জন্য ওষুধ এবং ইনসুলিনের সঠিক সমন্বয় করা অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি সকালে ইফতারের পর ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ করেন এবং রাতে সাহ্রিতে ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তবে রোজা রাখা অনেক সহজ এবং নিরাপদ হয়ে ওঠে। তবে, যদি বেশি ইনসুলিন বা ওষুধের প্রয়োজন হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের নির্বাহী পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, "প্রান্তিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস সচেতনতা বৃদ্ধি করা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব। এসকেএফ ২০১২ সাল থেকে বিশ্বমানের ইনসুলিন উৎপাদন করছে, এবং এখন এটি ৩২টি দেশে রপ্তানি হবে।"
এছাড়া, গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের চিকিৎসকেরা অংশগ্রহণ করেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মাহমুদুল হক, এসেডবির সহসভাপতি মো. রুহুল আমিন, হলি ফ্যামিলির মীর মোশাররফ হোসেন এবং ঢামেকের মোবারক হোসেন।
এই ধরনের আলোচনা ও সচেতনতা বৃদ্ধি হলে, ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে সক্ষম হবেন স্বাস্থ্যকরভাবে এবং শারীরিক ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪