প্রকাশিত: ১০:১৯ ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

আজমির শরিফের নিচে শিব মন্দিরের দাবি: আদালতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পিটিশন
ভারতের রাজস্থানের আজমির জেলার বিখ্যাত আজমির শরিফ দরগা নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন 'হিন্দু সেনা' সম্প্রতি আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেছে, যেখানে তারা দাবি করেছে যে, আজমির শরিফের নিচে একটি শিব মন্দির রয়েছে। এই পিটিশনটি গত সেপ্টেম্বর মাসে দায়ের করা হয় এবং ভারতের আদালত ইতোমধ্যে এই দাবি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
আজমির শরিফ, খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগা, আকবরের আমল থেকে পরিচিত এবং প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এখানে আসেন। তবে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর দাবি, এটি একটি প্রাচীন শিব মন্দির ছিল এবং পরবর্তীতে এটি দরগায় পরিণত হয়েছে।
হিন্দু সেনার পক্ষ থেকে এই পিটিশন দায়ের করার পর, আদালত আজমির পশ্চিম দায়রা বিচারক সিনিয়র ডিভিশন মনমোহন চান্দেল পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন। আদালত দরগা কমিটি, সংখ্যালঘু বিষয়ক দপ্তর এবং ভারতের পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণকে নোটিশ দিয়ে তাদের মতামত জানানোর নির্দেশ দিয়েছে।
হিন্দু সেনার দাবি: হিন্দু সেনার পক্ষ থেকে বিষ্ণু গুপ্তা দাবি করেছেন, “আজমির শরিফকে ‘সংকট মোচন মহাদেব’ মন্দির হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।” তারা আরও বলেন, যদি দরগার কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন থাকে, তা বাতিল করতে হবে এবং ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থাকে দিয়ে জরিপ করাতে হবে। এছাড়া, তারা হিন্দুদের সেখানে পূজা করার অধিকার দেওয়ার দাবি করেছেন।
এছাড়া, পিটিশনে ১৯১১ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হর্বিলাস সার্দারের লেখা একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে আজমির শরিফের চারপাশে হিন্দু ধর্মের মৃৎশিল্প ও খোদাই থাকার দাবি করা হয়েছে। বইটি দাবি করে, শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে দরগাটি তৈরি করা হয়েছে এবং এখনো এখানে একটি জৈন মন্দির রয়েছে।
মাজার কমিটির প্রতিক্রিয়া: মাজার কমিটি এই দাবি অস্বীকার করেছে। আঞ্জুমান সৈয়দ জাদগানের সেক্রেটারি সৈয়দ সারওয়ার চিশতী বলেন, “এখানে বহুত্ববাদ প্রচার হয়। আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এই মাজারে আসেন।” তিনি আরও বলেন, "এই ধরনের পিটিশন ও আদালতের এমন সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।"
মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ: আজমির শরিফকে শিব মন্দির হিসেবে দাবি করে আসছে হিন্দু সংগঠনগুলি ২০২২ সাল থেকে। মহারানা প্রতাপ সেনা দাবি করেছে যে, দরগার জানালায় একটি স্বস্তিকা চিহ্ন রয়েছে, যা তাদের মতে প্রমাণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দাবি জানিয়ে আসছে তারা।
আগাম পরিণতি: এখন দেখার বিষয় হবে, আদালত এই বিতর্কিত দাবির বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি কিভাবে প্রভাবিত করে। পিটিশন দাখিলের পর থেকেই সারা দেশে এই বিতর্ক আরও গভীর হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, এটি ভারতীয় সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র হতে পারে।
নিষ্কর্ষ: আজমির শরিফের নিচে শিব মন্দির থাকার দাবি, রাজস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান এবং সংখ্যালঘুদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় এই মামলাটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলি ভারতীয় সমাজের সাম্প্রদায়িক দৃশ্যপটের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪