প্রকাশিত: ০৪:৪৫ ২৮ নভেম্বর ২০২৪

‘চূড়ান্ত ডাক’ দিয়েও ব্যর্থ বুশরা, কী হবে পিটিআইয়ের পরবর্তী পদক্ষেপ?
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের নেতা ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে ইসলামাবাদে হাজার হাজার পিটিআই কর্মী একত্রিত হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন। এই বিক্ষোভের মাধ্যমে পিটিআই সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করলেও, শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়।
ইসলাবাদে বিশৃঙ্খলা এবং প্রাণহানির ঘটনা
ইসলামাবাদের ডি-চকে পিটিআই কর্মীরা একত্রিত হয়ে তিনটি প্রধান দাবিতে অবস্থান নেন—ইমরান খানের মুক্তি, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি এবং সরকার দ্বারা সংবিধান সংশোধনীর বাতিল। তবে, বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন পিটিআই কর্মী নিহত হন এবং শতাধিক আহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পিটিআই কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন, আর সংঘর্ষের সময় তিন রেঞ্জার এবং এক পুলিশ কনস্টেবলও নিহত হয়েছেন।
বুশরা বিবির সিদ্ধান্ত: ‘চূড়ান্ত ডাক’ থেকে সরে আসা
তবে, যেদিন পিটিআই নেতারা এই বিক্ষোভের ‘চূড়ান্ত ডাক’ দেন, ঠিক সেদিনই দলের শীর্ষ নেতাদের এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি বদলে যায়। ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি, যিনি আগে বলেছিলেন, ইমরান খান মুক্তি না পেলে তিনি ফিরে যাবেন না, হঠাৎ করেই বিক্ষোভস্থল ত্যাগ করেন। পাশাপাশি, পিটিআই নেতা আলী আমিন গান্দাপুরও কর্মীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
এই আচরণ দলের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পিটিআই দলের জন্য একটি বড় বিপর্যয়, কারণ তারা এই বিক্ষোভকে 'চূড়ান্ত ডাক' হিসেবে দাবি করেছিল।
পিটিআইয়ের পরবর্তী কৌশল নিয়ে প্রশ্ন
এখন প্রশ্ন উঠছে—পিটিআই এই ব্যর্থতার পর কী পদক্ষেপ নেবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিক্ষোভের ব্যর্থতা দলের পরবর্তী কৌশলের জন্য একটি বড় ধাক্কা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাইঘাম খান আল-জাজিরাকে বলেছেন, "যে আন্দোলনকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল, তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হওয়া পিটিআইয়ের জন্য একটি বড় আঘাত।" এ অবস্থায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে কৌশল পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এদিকে, পিটিআই দাবি করেছে, তাদের আটজন সমর্থক বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। সরকারের দাবি, পিটিআই সমর্থকেরা সহিংসতা ছড়াতে চেয়েছিলেন এবং সশস্ত্র ছিল।
নতুন কৌশল গ্রহণের পরামর্শ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পিটিআই নতুন করে বড় বিক্ষোভে না গিয়ে বরং নতুন কৌশল গ্রহণ করতে পারে। লাহোরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বেনজির শাহ বলেছেন, "এ মুহূর্তে পিটিআইয়ের পক্ষে আরেকটি বড় বিক্ষোভ শুরু করা সম্ভব নয়। তারা নতুন কৌশল হিসেবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন এবং জনপ্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। মানবাধিকার এবং সামাজিক ইস্যু সামনে রেখে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারে।"
সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা
পিটিআইয়ের বিক্ষোভের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্র রানা ঈশান আফজাল বলেছেন, “পিটিআই সমর্থকরা সশস্ত্র ছিলেন এবং সহিংসতা ছড়াতে চেয়েছিলেন। তারা নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছিলেন।” এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বুশরা বিবির ওপর দোষারোপ করে বলেন, “এই অস্থিরতার পেছনে তার (বুশরা) দায় রয়েছে।”
দলীয় বিভাজন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এখন প্রশ্ন উঠেছে, পিটিআই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এই ঘটনার পর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইসলামাবাদের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আহমেদ ইজাজ বলেছেন, "বুশরা এবং গান্দাপুরের আচরণ দলের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর করবে। এই ঘটনার পর দলের মধ্যে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হতে পারে।"
এদিকে, পিটিআই নেতা সাঈদ জুলফি বুখারি মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন, তবে তিনি বলেছেন, "বর্তমানে আমাদের মূল লক্ষ্য হল হতাহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সময় নেওয়া।"
ভবিষ্যত পথ
তথ্য অনুযায়ী, পিটিআই এখন তাদের পরবর্তী কৌশল নিয়ে পুনরায় ভাবছে। সরকার এবং পিটিআইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে এবং এটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। দলের নেতারা হয়তো নতুন করে নিজেদের কৌশল গঠন করবেন এবং আসন্ন সময়ের মধ্যে নতুন কিছু রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিতে পারেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪