বাংলাদেশে রেমিট্যান্স ডলারের দাম বাড়তেই আছে

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স ডলারের দাম নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়, যেখানে সর্বোচ্চ রেট ১২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ তিন সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর, রেমিট্যান্স ডলারের বাজারে আবার অস্থিরতার সূচনা হয়েছে, যেটি মূলত পুরনো পেমেন্ট নিষ্পত্তি করার চাপের কারণে তৈরি হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে রেমিট্যান্স ডলারের ক্রয়মূল্য ১২২.৫০ টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে, যা গত দুই সপ্তাহে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৮ জানুয়ারি একদিনেই দাম ২০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু ১২২ টাকাই সর্বোচ্চ রেট হিসেবে নির্ধারণ করেছে, ব্যাংকগুলো এখনো ওই রেটের ভিত্তিতে তথ্য প্রদান করছে।

আগের নির্দেশনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স লেনদেনের জন্য সর্বোচ্চ ১২২ টাকা নির্ধারণ করেছিল এবং ব্যাংকগুলোর জন্য ১ টাকার বেশি পার্থক্য না রাখার শর্ত দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো যখন পুরনো পেমেন্ট নিষ্পত্তি করতে আরও বেশি ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করতে শুরু করেছে, তখন দাম বাড়তে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলার ফোরামের ২৭ জানুয়ারির বৈঠকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে ব্যাংকগুলো দ্রুত আমদানি ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি নিষ্পত্তি করতে পারে। এই কারণে রেমিট্যান্স ডলারের চাহিদা দ্রুত বেড়ে গেছে, এবং একদিনেই ২০ বেসিস পয়েন্ট দাম বাড়ে।

একটি ফরেন এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর কিছুটা বাজার স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে আবার অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “ব্যাংকগুলো এখন বেশি দামে ডলার কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অনেক বেশি দামে ডলার কেনার জন্য প্রতিযোগিতা করছে।”

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, “আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছি না এবং আমাদের আন্তঃব্যাংক বাজারের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে না।” ফলে, কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত দাম দিয়ে ডলার সংগ্রহ করছে।

এদিকে, কিছু ব্যাংক বিশেষভাবে বেশি দাম দিয়ে রেমিট্যান্স ডলার কেনার চেষ্টা করছে। এক বেসরকারি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, “এটা পরিষ্কার যে, যেসব ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনছে, তারা বেশি রেমিট্যান্স পাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংককে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে, যখন ডলারের দাম ১২৮ টাকার কাছাকাছি চলে যায়, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি ব্যাংককে ডলার কেনার ব্যাখ্যা দিতে বলেছিল এবং তাদের ১২৩ টাকার বেশি দামে ডলার না কেনার নির্দেশ দিয়েছিল।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ. মঞ্জুর নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ব্যাংকগুলোকে এক রেট নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক ছোট ফরেন এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন সুযোগ ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারি ১ থেকে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি ব্যাংকগুলোকে রেমিট্যান্স ডলার বিক্রি করতে পারবে, এবং তাদের আর সিকিউরিটি ডিপোজিট বা এনআরএফসি অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম ব্যালেন্স রাখার প্রয়োজন হবে না।