ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ

ঢাকার বাতাসের গুণমান আজ আবারও উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) এর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই স্কোর ছিল ৩৩৬, যা বায়ুদূষণের মাত্রাকে ‘বিপজ্জনক’ স্তরে নিয়ে গেছে। এই মাত্রা শহরের বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা আজ তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর শীর্ষে রয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লি। দিল্লির একিউআই স্কোর ৪৯৯, যা বাতাসের মানকে ‘বিপজ্জনক’ স্তরের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনের চেঙডু শহর, যার স্কোর ৪২১। ঢাকার পাশাপাশি চীনের উহান শহরও ৩৩৫ স্কোর নিয়ে একই স্তরে রয়েছে।

একিউআই স্কোর অনুযায়ী, ১০১ থেকে ২০০ পর্যন্ত স্কোরকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর। ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১ থেকে ৪০০ স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকার বর্তমান স্কোর এই বিপজ্জনক মাত্রাকেই নির্দেশ করছে, যা শহরের বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।

বাংলাদেশে বায়ুর মান নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি দূষণকারী উপাদানের ওপর ভিত্তি করে। এগুলো হলো— বস্তুকণা (পিএম-১০ ও পিএম-২.৫), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (এনও২), কার্বন মনোক্সাইড (সিও), সালফার ডাইঅক্সাইড (এসও২) এবং ওজোন (ও৩)। এর মধ্যে পিএম-২.৫ কণা সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটি বাতাসে থাকা ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি, যা মানবদেহে প্রবেশ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এনও২ গ্যাস প্রধানত পুরোনো যানবাহন, শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং জ্বালানি পোড়ানোর ফলে তৈরি হয়।

ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে শীতকালে বায়ুর গুণমান মারাত্মকভাবে খারাপ হয়, যেখানে বর্ষাকালে কিছুটা উন্নতি দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে যানবাহনের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, শিল্পকারখানার দূষণ কমানো, নির্মাণকাজের সময় ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণ এবং সবুজায়ন বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

ঢাকার বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বায়ুদূষণ রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।