বর্তমানে ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয় হয়ে উঠেছে ফ্রাঞ্জাইজি ক্রিকেট। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট প্রেমিরাও ঝুকে পড়েছে ফ্রাঞ্জাইজি ক্রিকেটের ভালোবাসায়। যার ফলে বিশ্বের অনেক দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে এক ভিন্ন রকমের সংস্কৃতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে অনেক দেশেই এখন এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
আর এর বড় প্রভাব পড়েছে আফগান ক্রিকেটারদের মধ্যে। মুজিব-উর রহমান, ফজলহক ফারুকি ও নাভিন-উল হক আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়েছে যে তাদের নাম যেন ক্রিকেটারদের বার্ষিক চুক্তির তালিকায় না রাখা হয়। এবং সেই সাথে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অনুমতি চেয়ে আর্জি করেন। যার ফলে ক্ষিপ্ত আফগান ক্রিকেট বোর্ড।
কেননা ক্রিকেটারদের বার্ষিক চুক্তির তালিকায় নাম না থাকা মানে ঐসব ক্রিকেটারদের জাতীয় দলের খেলার সময় নাও পাওয়া যেতে পারে। আবার দেখা যেতে পারে একবারেই পাবে না। যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনিল নারিন শুধু ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটই খেলেন। জাতীয় দলের হয়ে সার্ভিস দেন না তিনি।
যে কারণে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ক্ষিপ্ত এই তিন ক্রিকেটারের ওপর। শুধু তাই নয়, মুজিব-উর রহমান, ফজলহক ফারুকি ও নাভিন-উল হকের আগামী দুই বছরের জন্য ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলার পথও রুদ্ধ করে দিয়েছে আফগান ক্রিকেট বোর্ড। এই তিন জন আগামী দুই বছর তারা ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার জন্য কোনো ছাড়পত্র পাবে না।
দেশের হয়ে খেলার চেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য, মুজিব-উর রহমান, ফজলহক ফারুকি ও নাভিন-উল হকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড। এই বিষয়টিকে তারা একটি জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে দেখছেন এবং এ জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য বাংলাদেশের সম্ভাব্য সেরা একাদশ ঘোষণা
আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (এসিবি) এক বিবৃতিতে কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এই তিন খেলোয়াড় আনুষ্ঠানিকভাবে এসিবিকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেদের মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এবং জাতীয় ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য তাদের সম্মতি বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই খেলোয়াড়দের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার উদ্দেশ্য হল, টি-টোয়েন্টির বাণিজ্যিক লিগে খেলা। এখানে আফগানিস্তানের হয়ে খেলার চেয়ে, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। চুক্তি থেকে তাদের মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এই খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে।’
এসিবির কাছে সেই কমিটি তিন খেলোয়াড়ের শাস্তির যে সুপারিশ করেছে-
১) কেন্দ্রীয় চুক্তি না দেওয়া: ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই তিন খেলোয়াড় এক বছরের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তির যোগ্য হবেন না। এ ক্ষেত্রে, এসিবি প্রয়োজনে ইভেন্টগুলিতে তাদের অংশগ্রহণ বিবেচনা করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে।
২) অন্যত্র খেলার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না: এই খেলোয়াড়দের দুই বছরের জন্য অন্যত্র খেলার ছাড়পত্র (এনওসি) দেওয়া হবে না। বাকি তাদের যাবতীয় যে এনওসি দেওয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে বাতিল করা হবে।
৩. আইসিসি, এসিসি, সদস্য দেশ/ক্রিকেট বোর্ড এবং আফগানিস্তানের জনগণসহ ক্রিকেট সম্প্রদায়কে স্বচ্ছভাবে এসিবি তাদের অবস্থান জানিয়ে দেবে।
সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলের মিনি নিলামে মুজিব-উর রহমানকে দলে ভিড়িয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিনি বর্তমানে বিগ ব্যাশে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। খেলছেন মেলবোর্ন রেনেগেডসের হয়ে।
আইপিএলে লখনৌ সুপার জায়ান্টস ধরে রেখেছে নাভিন-উল হককে এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদ আবার রিটেইন করেছে ফজলহক ফারুকিকে। এই দুই খেলোয়াড় বর্তমান সময়ে আবুধাবি টি-টেন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। এই তিন জন ক্রিকেটার আফগানিস্তানের হয়ে সদ্য শেস হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে অংশ নেন।
আফগান ক্রিকেট বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে এখন বড় বিপদে পড়ে গেল আইপিএলের তিন দল। কলকাতা নাইট রাইডার্স, লখনৌ সুপার জায়ান্টস এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। ২০২৪ আইপিএল শুরুর আগেই বড় ধাক্কা খেতে চললো তারা।