প্রকাশিত: ১০:৩৯ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শবেবরাতের রোজা রাখবেন কোন কোন দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক: পৃথিবী থেকে আকাশের সীমানা পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের ছায়ায় বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া এক রজনী—এটা শবেবরাত। হ্যাঁ, ‘শবেবরাত’ কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুক্তির গন্ধ, সেই মুক্তি যে সমস্ত গুনাহ থেকে আমাদের মুক্ত করে আল্লাহর অশেষ রহমতের দিকে নিয়ে যায়। যদিও কোরআনে সরাসরি শবেবরাতের উল্লেখ নেই, তবে হাদিসে এটি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ, শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত, যে রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দয়া ও ক্ষমার দৃষ্টি দেন।
এই রাতের গুরুত্ব এক কথায় বর্ণনা করা কঠিন, তবে এটি সেই রাত, যখন আল্লাহ তাআলা পৃথিবী থেকে আকাশে অবতীর্ণ হয়ে তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং রহমত বর্ষণ করেন। আর এই বিশেষ রাতের মধ্যে রয়েছে কিছু মূল্যবান আমল, যা আমাদেরকে তার রহমতের সৌন্দর্য অনুভব করতে সাহায্য করে। চলুন, আজ আমরা জানি শবেবরাতের চারটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা আমাদের জীবনে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত নিয়ে আসবে।
১. নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিবেদন
শবেবরাতের রাতে নামাজ একটি অমূল্য উপহার। নবী (সা.) দীর্ঘ সময় সিজদা করে রাতের ইবাদত করেছেন, এমনকি সাহাবি আয়েশা (রা.) ভেবেছিলেন তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। নবী (সা.) এ রাতের বিশেষ ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন, "এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি গভীর মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন" (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৫৫৪)। অতএব, এই রাতে দীর্ঘ কিরাত ও সিজদার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিবেদন করা উচিত, যেন তাঁর রহমত আমাদের জীবনে ছড়িয়ে পড়ে।
২. তাওবা ও ইস্তিগফারের সুরে আত্মশুদ্ধি
এ রাতে তাওবা ও ইস্তিগফার করা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলোর মধ্যে একটি। হাদিসে বলা হয়েছে, "যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে, আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে মুশরিক ও বিদ্বেষী ছাড়া সকলের গুনাহ মাফ করে দেন" (মুসনাদে বাজজার, হাদিস: ৮০)। এই রাতে আমাদের উচিত অতীতের সকল গুনাহ ও ভুলগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাঁর রহমতের প্রতি আত্মসমর্পণ করা।
৩. কোরআন তিলাওয়াতের মাধুর্যে আল্লাহর নৈকট্য লাভ
কোরআন তিলাওয়াত করা আল্লাহর কাছ থেকে প্রেম অর্জনের একটি পথ। সাহাবি আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, "যারা কোরআন বেশি তিলাওয়াত করে, তারা আল্লাহ তাআলার পরিবার" (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২১৫)। শবেবরাতের রাতে কোরআন তিলাওয়াত করলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয় এবং তাঁর রহমত লাভের রাস্তা সুগম হয়। তাই, এই রাতে আল্লাহর বাণী পাঠ করার মাধ্যমে আমাদের হৃদয়ে আল্লাহর মেহেরবানী আহ্বান করা উচিত।
৪. রোজা রাখার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসের পূর্ণতা
শবেবরাতের পরের দিন রোজা রাখা আমাদের ইবাদতকে আরও পূর্ণতা দেয়। নবী (সা.) বলেছেন, "১৫ শাবানের রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং পরের দিন রোজা রাখো" (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৩৮৮)। যদিও হাদিসটির সনদ কিছুটা দুর্বল, তবুও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি প্রমাণ করে যে, শাবান মাসে নফল রোজা রাখার গুরুত্ব রয়েছে এবং এই রাতে রোজা রাখা আমাদের আত্মশুদ্ধির একটি মাধ্যম।
শবেবরাত, এই রজনী, যে রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দেন, আমাদের জন্য একটি সুযোগ—একটি মহা সুযোগ, যাতে আমরা নিজেদের ভুলগুলো থেকে ফিরে এসে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে পারি। আসুন, আমরা সবাই এই রাতের ফজিলত লাভে সচেষ্ট হই, তার রহমত, ক্ষমা ও বরকত আমাদের জীবনে ছড়িয়ে পড়ুক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই রজনীতে তাঁর অশেষ রহমত দান করুন। আমিন।
জাকারিয়া/
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪