প্রকাশিত: ০৬:২১ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রমজান মাসে সঠিক ইফতার: দোয়া, ফজিলত ও খাদ্যাভ্যাস
নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান, যে মাসে শুধু শরীর নয়, আত্মাও উপবাস থাকে, সেই মাসে ইফতার হল এক বিশেষ মুহূর্ত। সারা দিন রোজা রাখার পর, যখন সূর্যাস্তের সঙ্গেই খাবারের প্রথম কামড় নিই, তখন তার সঙ্গে মিশে যায় এক অসীম তৃপ্তি। এই সময় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুখে ডালা নিয়ে বসে থাকার চেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে? তবে, শুধু খাবারেই সীমাবদ্ধ নয়, ইফতার হোক যেন একটি আধ্যাত্মিক পুনর্জন্মের শুরু।
ইফতারের দোয়া—আত্মা ও দেহের জন্য পবিত্র চাহিদা
রমজানের প্রতিটি দিনের শেষে, যখন আমরা ইফতার করি, তখন এক বিশেষ দোয়া আমাদের অন্তরকে শুদ্ধ করে।
আরবি উচ্চারণ:
بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার প্রদত্ত রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।
এই দোয়া আমাদের শরীর ও মনকে একত্রিত করে, যেন এই রোজা শুধুমাত্র খাদ্য থেকে বিরত থাকার জন্য নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। এই মুহূর্তে আমাদের সমস্ত শঙ্কা, দুশ্চিন্তা যেন হারিয়ে যায়, এবং এক ধরনের শান্তি ঘিরে ধরে আমাদের হৃদয়।
ইফতারের সুন্নত: সঠিক সময়ের সঙ্গে সুস্পষ্ট সৌন্দর্য
ইফতারের সময় আসলেই আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। সূর্যাস্তের সময় ইফতার করা সুন্নত, আর এর মধ্যে যে আনন্দ, তা এক অনন্য অনুভূতি। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতার করতেন খেজুর দিয়ে—এটি ছিল তাঁর পছন্দ। টাটকা খেজুর না পেলে শুকনা খেজুর, আবার সেটাও না পেলে পানি পান করতেন। এটা ছিল এক প্রতীকী ইফতার, যেখানে শুধুমাত্র খাদ্য নয়, অন্তরের শান্তি ছিল প্রধান।
ফজিলত ও সওয়াব: যাঁরা ইফতার করান, তাঁদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত
রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করায়, তার সওয়াব রোজাদারের মতোই হবে।" ইফতার করানোর মাধ্যমে এক ধরনের দানশীলতা এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা লাভ হয়। এই সওয়াবের মাধ্যমে একজন মানুষ সত্যিই লাভবান হয়, কারণ রমজান হচ্ছে এমন একটি মাস, যেখানে ছোট ছোট কাজেরও অসীম ফল পাওয়া যায়।
ইফতারের খাদ্যাভ্যাস: সুষম, হজমযোগ্য এবং স্বাস্থ্যকর
রমজানে, খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আসে, এবং সঠিকভাবে ইফতার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিবিদরা বলেন, ইফতার করার সময় খাবার এমন হতে হবে, যা সহজে হজম হয়। ভারী বা অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। তাই ইফতারকে যেন এক সাধ্যের সীমা অতিক্রম না করে, বরং সেই খাবারটি গ্রহণ করা উচিত, যা শরীরকে সতেজ করে তোলে।
ইফতারের জন্য প্রস্তাবিত খাবার:
১. খেজুর ও পানি: ইফতার শুরু হোক ১-২টি খেজুর ও কিছু পানি দিয়ে। এটি শরীরের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটায় এবং পুষ্টির উৎস হিসেবে কাজ করে।
২. হালিম: হালিমে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের সুন্দর সমন্বয় থাকে, যা শরীরকে শক্তি দেয়।
৩. তরল খাবার: স্যুপ, ফলের জুস বা স্মুদি, এগুলো সহজপাচ্য এবং হজমযোগ্য।
৪. সবজি ও প্রোটিন: সবজি, চিকেন বা খিচুড়ি, এগুলো পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং শরীরকে প্রশান্ত রাখে।
৫. ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন: ভাজা-পোড়া বা মসলাযুক্ত খাবারের পরিবর্তে দই, চিড়া বা ফলের স্যালাড নেওয়া উচিত।
ইফতার: দান ও সওয়াবের প্রতীক
রমজান মাসে গরিব রোজাদারদের ইফতার করানো একটি বিশেষ কাজ, যা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। এতে শুধু যে রোজাদার লাভবান হয়, তা নয়, যে সাহায্য করে, সে-ও আল্লাহর কাছে বিশেষ পুরস্কৃত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি অন্যকে ইফতার করায়, সে নিজের সওয়াবের সমান সওয়াব পায়।"
শেষ কথা:
ইফতার শুধু খাওয়ার সময় নয়, এটি একটি মহৎ কাজের শুরু, যেখানে রোজাদারের মধ্যে রয়েছে আত্মশুদ্ধি, ভাইচারা এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের পুনর্স্থাপন। তাই রমজানে ইফতারের সময় শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে এক সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত।
জাকারিয়া/
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪