প্রকাশিত: ১২:০৯ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রমজান: আত্মশুদ্ধি এবং প্রস্তুতির মাস
নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান, এক অনন্য সুযোগ যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর কাছে আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে পবিত্র প্রস্তুতির মাধ্যমে রোজার মাস শুরু করতেন, তেমনি আমাদেরও প্রস্তুতির প্রয়োজন—একটি সৃজনশীল এবং গভীর প্রস্তুতি, যা আমাদের রোজাকে করবে আরও অর্থপূর্ণ।
১. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
রমজানের প্রথম দিনেই যেন মনে হয়, এক নতুন জীবন শুরু হচ্ছে, তাই রোজার মাসের আগেই সব গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সেরে ফেলুন। একটি নতুন বই খোলার আগে যেমন আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়, তেমনি রমজান মাসে প্রবেশের আগে আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা উচিত। আর এতে আমরা শুধু সময়ই বাঁচাবো না, প্রতিটি মুহূর্তকে পবিত্রতা ও ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দিয়ে কেবল ইবাদতে মনোযোগী হতে পারব।
২. রোজার জন্য সঠিক প্রস্তুতি:
রমজান এসে যাওয়ার আগে, সঠিক প্রস্তুতির জন্য একপাশে কেনাকাটার তালিকা প্রস্তুত করুন। খাদ্য, পানীয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগেই সংগ্রহ করুন। চিন্তা করুন, যেন রোজার সময় কোনো বিরক্তি বা অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মাথায় না আসে। আপনার মন যেন কেবল আল্লাহর ইবাদতেই ব্যস্ত থাকে।
৩. শক্তি ও ইচ্ছাশক্তি:
রমজান কেবল রোজা রাখার সময় নয়, এটি একটি আত্মবিশ্লেষণের সময়ও। কীভাবে আপনি এই মাসে নিজের ইবাদত এবং আত্মশুদ্ধি বৃদ্ধি করতে চান, সে বিষয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন। আপনি কোরআন কতটুকু তেলাওয়াত করবেন? প্রতিদিন কতটুকু সময় কোরআন পড়বেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আপনার মন থেকে বেরিয়ে আসে, তবে আপনি নিশ্চিতভাবে সফল হবেন। প্রতিদিনের কাজগুলোকে এমনভাবে সাজান, যেন রোজা শুরুর প্রথম দিন থেকে আপনার মন এবং শরীর সুরেলা হয়ে ওঠে।
৪. সহিহ তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন:
রমজান হলো কোরআন নাজিল হওয়ার মাস। তাই এই পবিত্র মাসে কেবল কোরআন তেলাওয়াতই নয়, তার অর্থ বোঝা এবং শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি ও ইফতারের মাঝে কিছু সময় আল্লাহর কালাম নিয়ে চিন্তা করুন এবং তার অর্থ শিখুন। এছাড়া, সহিহ তেলাওয়াতের জন্য ক্লাসে যোগ দিন। এটি আপনাকে শুধুমাত্র কোরআন তেলাওয়াতের মান উন্নত করবে না, আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়াবে।
৫. নফল ইবাদত:
রমজান মাসে সওয়াবের জগতে প্রবেশ করতে নফল ইবাদত সবচেয়ে সহজ উপায়। তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া এবং জিকিরের মাধ্যমে এক নতুন দুনিয়ায় পা রাখুন। সেহরির সময় এই সমস্ত কাজে ব্যস্ত থাকুন, আর দিনভর এক এক করে আপনার কাজগুলো শেষ করুন, যেন প্রতিটি দিন এক পবিত্র অভিযানে পরিণত হয়।
৬. ইতেকাফ এবং আত্মসমীক্ষা:
রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতেকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলুন। এটি একধরণের আত্মসমীক্ষা, যেখানে আপনি নিজের নফসকে কাবু করতে শিখবেন এবং আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেবেন।
৭. পারিবারিক দ্বীনি পরিবেশ:
রমজান শুধু ব্যক্তিগত অভ্যন্তরীণ শুদ্ধির সময় নয়, এটি পরিবারের সদস্যদের দ্বীনের পথে পরিচালিত করার এক সৃজনশীল সুযোগও। বিশেষত সন্তানদের ইসলামিক শিক্ষা দেওয়া, পরিবারের মধ্যে ইসলামি আচার-আচরণ তৈরি করা—এটা যেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য একটি সৃজনশীল আন্দোলন হয়ে ওঠে। একসাথে কোরআন তেলাওয়াত করা, ইসলামি সাহিত্য পড়া—এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো পরিবারের মধ্যে এক নতুন আলেয়া তৈরি করবে।
৮. রমজানের পবিত্রতা রক্ষা:
রমজানের পুরো পবিত্রতা রক্ষা করা, এটি একটি বিশাল দায়িত্ব। আপনার পরিবারের এবং সমাজের মধ্যে যেন কেউ রোজা না রাখে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। ছোট ছোট সতর্কতা এবং পরামর্শ দিয়ে একটি সুরক্ষিত পরিবেশ তৈরি করুন, যেন সবাই রোজা রাখতে উৎসাহিত হয়।
৯. আল্লাহর সাহায্য কামনা:
সবশেষে, আপনার প্রস্তুতিতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। মনে রাখবেন, সৃজনশীলতার সাথে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য। তিনি যদি আমাদের সহায়তা করেন, তবে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।
রমজান মাস এমন একটি অভ্যন্তরীণ যাত্রা যেখানে আপনার আত্মার সব অপূর্ণতা পূর্ণ হয়ে উঠবে। এটি এমন একটি মাস, যেখানে আপনি নিজের প্রতিটি মুহূর্তকে সৃজনশীলভাবে সাজিয়ে এক পবিত্র অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন আনতে পারেন।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪