প্রকাশিত: ০৭:২৬ ৩ মার্চ ২০২৫

রমজানে তাকওয়া অর্জনের সহজ উপায়
নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজান, যেটি আমাদের জন্য একটি পূণ্যের মাস, শুধু রোজা রাখার জন্য নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক উন্নতির সময়। মহান আল্লাহর নির্দেশে আমরা এই মাসে উপবাস করি, কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য হল আল্লাহভীতি অর্জন—যা আমাদের জীবনকে আলোকিত করে, আমাদের আত্মাকে শুদ্ধ করে। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, "হে মুমিনরা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)
তাহলে রোজা শুধু শারীরিক ত্যাগ নয়, বরং এটি আমাদের আত্মিক উন্নতির এক শক্তিশালী উপায়। যখন কেউ এই মাসে আল্লাহভীতি অর্জন করতে সক্ষম হয়, তখন তার সিয়াম সাধনা সত্যিই সফল হয়।
আল্লাহভীরু মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেছেন, "আল্লাহভীরু মানুষরা সেই সব মানুষ, যারা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অবিচল, যারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তাদের জীবন সৎ, সরল এবং সুন্দর।" তারা এমন কিছু বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ থাকে যা তাদের আল্লাহভীতি বা তাকওয়া প্রকাশ করে।
তারা তাদের কথার মধ্যে সততা ও সুনীতির নিদর্শন রেখে চলেন।
তারা নিজের জীবনকে শুধু বৈশিক নয়, আধ্যাত্মিকভাবেও সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
তারা কম কিছুর মধ্যে তৃপ্ত হন এবং অনেক কিছু অর্জন করেও অহংকার বা লোভ থেকে দূরে থাকেন।
তারা কঠিন সময়েও ধৈর্য ধারণ করেন এবং বিপদে পড়ে কখনো হাল ছাড়েন না।
এইসব গুণ তাদেরকে আল্লাহর কাছে আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়।
তাকওয়া অর্জনের সৃজনশীল উপায়
রমজানের মধ্যে তাকওয়া অর্জন করা একটি গভীর আধ্যাত্মিক যাত্রা। এখানে কিছু উপায় রয়েছে যা অনুসরণ করে আপনি এই যাত্রা সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেন:
১. সতর্কতার পথে হাঁটা: আল্লাহভীরু হতে হলে, এমনকি সন্দেহজনক বিষয়গুলো থেকেও বিরত থাকতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি বৈধ কিন্তু সন্দেহজনক কাজের মধ্যে থেকেও পরিহার করে, সে আল্লাহভীরু হতে সক্ষম।" (সুনানে তিরমিজি)
২. ক্ষমার পথ অনুসরণ: ক্ষমা শুধুমাত্র মানুষের মধ্যে শান্তি আনে না, বরং এটি আল্লাহর কাছেও তাকওয়া অর্জনের একটি শক্তিশালী উপায়। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "এবং ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতর।" (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৩৭)
৩. সুবিচারের আলোকিত পথে চলা: আল্লাহভীরু ব্যক্তি কখনো অন্যের প্রতি অবিচার করেন না। তাদের বিচার সবসময় ন্যায় ও সঠিক হয়। কোরআন জানায়, "তোমরা সুবিচার করো, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী।" (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)
৪. সত্যের অনুসরণে দৃঢ় থাকা: যে ব্যক্তি সত্যকে গ্রহণ করে, সে আল্লাহভীরু হয়ে ওঠে। কোরআন বলছে, "যারা সত্য এনেছে এবং সত্য বলে স্বীকার করেছে, তারাই আল্লাহভীরু।" (সুরা : জুমার, আয়াত : ৩৩)
৫. দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া: তাকওয়া এক মহান অনুগ্রহ, যা শুধুমাত্র আল্লাহই প্রদান করতে পারেন। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যেন তিনি আমাদের তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দেন। কোরআনে বলা হয়েছে, "হে আমাদের প্রভু, আমাদের জন্য এমন সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখের আলো এবং আমাদের জন্য হতে পারে তাকওয়ার অনুপ্রেরণা।" (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৭৪)
৬. আল্লাহভীরুদের সঙ্গ গ্রহণ: আপনি যাদের সঙ্গ গ্রহণ করবেন, তাদের প্রভাব আপনার ওপর পড়ে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহভীরু মানুষদের সঙ্গ নিয়ে নিজেদের উন্নতি সাধন করা। কোরআন বলছে, "হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সৎ মানুষের সাথে থাকো।" (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)
তাকওয়ার পুরস্কার
তাকওয়া শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক উন্নতি এনে দেয় না, বরং এটি পৃথিবী ও আখিরাতে সফলতার এক সুনিশ্চিত রাস্তা। আল্লাহ বলেন, "যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ সুগম করবেন এবং তাকে এমন উপহার দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।" (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
এ মাসে আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যেন তিনি আমাদেরকে তাকওয়া অর্জনের তাওফিক দেন, এবং আমাদের আমলগুলো তাঁর সন্তুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমিন।
রহিম/
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪