প্রকাশিত: ০৪:৩৭ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মহানবী (সা.)-এর অভিভাবকদের প্রতি সতর্কবার্তা: আখিরাতের শপথ
প্রত্যেক বাবা-মা, তাদের সন্তানদের জন্য জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। সারা জীবনের সংগ্রামে তারা তাদের প্রিয়জনদের সুখের জন্য অশেষ ত্যাগ স্বীকার করেন—সময়, সম্পদ, মনের শান্তি, সবকিছুই যেন তারা তাদের পরিবারকে নিরাপদ এবং সুখী রাখতে দিয়ে যান। তবে, ইসলামের মর্মে এক গভীর শিক্ষা নিহিত, যা আমাদের সবার জন্য একটি চিরকালীন প্রজ্ঞার দিশারি—এটি হল, আমাদের দায়িত্ব শুধু দুনিয়াবি সুখ নিশ্চিত করা নয়, বরং আখিরাতের শাশ্বত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও।
হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অসীম শিক্ষার মধ্যে একটি মূল বার্তা রয়েছে: একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদের একমাত্র কাজ হলো আমাদের পরিবারকে আখিরাতের পথে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আল্লাহর নির্দেশে জীবন পরিচালনা করা, যাতে আমাদের প্রিয়জনেরা দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতার মায়ায় পড়ে তাদের আখিরাতের ভয়াবহ শাস্তি থেকে বাঁচতে পারে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, "হে মুমিনরা! তোমরা তোমাদের নিজেদের আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন আছে পাষাণ হৃদয় কঠোর স্বভাবের ফেরেশতা। আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না, আর তারা তাই করে, যা তাদের আদেশ করা হয়।" (সুরা তাহরিম, আয়াত: ৬)
এই আয়াতের প্রতিটি শব্দ যেন এক মহা আহ্বান—একটি মা-বাবার দায়ভার শুধু তাদের সন্তানের সুখী জীবন নয়, বরং তাদের আখিরাতের সুরক্ষা। যখন সন্তানরা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তখন একটি অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা, যেন তারা পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তি পায়।
আল্লাহ তার ভয়ানক শাস্তি সম্পর্কে জানিয়ে বলেন, "নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদের প্রবেশ করাব আগুনে। যখনই তাদের চামড়াগুলো পুড়ে যাবে, তখনই আমি তাদের পাল্টে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আস্বাদন করে আজাব।" (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৬)
এই শাস্তির ভয়াবহতা ভাবলেই শিরা-বাহী হতে হয়। কেবল আগুনের তাপ নয়, বরং সেই আগুন চামড়াকে শুষে শুষে, একের পর এক নতুন চামড়ায় তাদেরকে যন্ত্রণা দিতে থাকবে। তাদের শাস্তির তীব্রতা প্রতিনিয়ত বেড়ে যাবে, যেন কোনো কিছুতেই তাদের দুঃখের অবসান হবে না।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, "যে ব্যক্তিকে জাহান্নামের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি দেওয়া হবে, তার পায়ের তলায় দুটি জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হবে, যার ফলে তার মগজ ফুটে উঠবে।" (তিরমিজি, হাদিস: ২৬০৪)
এটি এমন একটি শাস্তি, যা কল্পনার বাইরেও বিরাট। চিন্তা করুন, এই শাস্তির সর্বনিম্ন স্তরের যন্ত্রণাও কিভাবে আমাদের শিরশিরে উঠাতে পারে। এমন কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা পেতে, আমাদের উচিত আমাদের পরিবারকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করা, তাদের গুনাহ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।
রাসুল (সা.) আরও বলেছেন, "তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।" (বুখারি, হাদিস: ৭১৩৮)
এখানে রাসুল (সা.) স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র—প্রত্যেক স্তরে আমরা দায়িত্বশীল। বিশেষত, গৃহকর্তা বা অভিভাবকের দায়িত্ব শুধুমাত্র তার পরিবারের খাবার, পোশাক ও শেল্টার নিশ্চিত করা নয়, বরং তাদের আখিরাতের দিকে একে একে সঠিক পথ নির্দেশনা দেয়া।
অভিভাবকরা যদি সত্যিই তাদের প্রিয়জনদের ভালোবাসেন, তবে তাদের জন্য শুধু দুনিয়া নয়, আখিরাতের পথেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। কেননা, সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু পৃথিবী নয়, চিরকালীন শান্তির দিকে মানুষকে নিয়ে যায়।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের পরিবার, প্রিয়জনদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের এবং পরিবারকে গুনাহের পথ থেকে বিরত রাখা, তাদের সঠিক শিক্ষা দেওয়া এবং নিজেদের সঠিক পথ অনুসরণে প্রেরণা দেয়া।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪