প্রকাশিত: ১১:০৬ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের ইন্টারনেট ভবিষ্যৎ ভারতের দখলে: প্রযুক্তির নামে পরাধীনতা
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিকাঠামো একদিকে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, অন্যদিকে অদৃশ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। সামিট গ্রুপ এখন দেশের ইন্টারনেট খাতের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়, যাদের হাতে একাধিক লাইসেন্স থাকার ফলে বাংলাদেশের ইন্টারনেট প্রবাহের অর্ধেকেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। কিন্তু এর পেছনের গল্পটি শুধু ব্যবসার নয়, বরং ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
কিভাবে সামিট গ্রুপ একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল?
২০০৯ সালের পর থেকে সামিট গ্রুপ টেলিকম খাতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে প্রবেশ করতে থাকে। শুরুতে তারা ন্যাশনাল টেলিকম ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স অর্জন করে, যা ছিল তাদের আধিপত্য বিস্তারের প্রথম ধাপ। এরপর তারা একে একে ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল ক্যাবল (আইটিসি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) লাইসেন্স লাভ করে। একের পর এক লাইসেন্স পাওয়ার মাধ্যমে তারা দেশের আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট প্রবাহের অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়।
ভারতনির্ভর ইন্টারনেট: স্বাধীনতা নাকি পরাধীনতা?
বাংলাদেশের ইন্টারনেট খাত এখন এতটাই ভারতনির্ভর যে, দেশের মোট ব্যান্ডউইডথের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করছে সামিট গ্রুপ। অথচ সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকার পরও এই ভারতনির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবল নির্ভরতা জাতীয় সাইবার নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভারত যদি রাজনৈতিক কারণে ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়বে। শুধু তাই নয়, দেশের ডিজিটাল সার্বভৌমত্বও হুমকির মুখে পড়বে।
নীতিমালার ফাঁকফোকর: প্রতিযোগিতার নামে একচেটিয়া দখল
২০১২ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে আইটিসি লাইসেন্স প্রদান করে, যার মধ্যে সামিট অন্যতম। তবে এই লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় নীতিমালার লঙ্ঘন হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হয় এবং সামিট আরও শক্তিশালী হয়।
উত্তরণের উপায়: কি করা উচিত?
সরকার এখনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, তবে নীতিমালা সংশোধনের কথা ভাবা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশীয় ব্যান্ডউইডথ উৎপাদন বাড়ানো, বিকল্প আন্তর্জাতিক সংযোগ তৈরি করা এবং সরকারি উদ্যোগকে আরও কার্যকর করা এখন সময়ের দাবি।
সামিট টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আল ইসলাম দাবি করেছেন, তাদের দক্ষতার কারণেই সামিট এই জায়গায় এসেছে এবং ভারতের ওপর নির্ভরতা থাকলেও তা ব্যবসায়িক বাস্তবতা। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, ভারতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ব্যবসায়িক নিশ্চয়তা যথেষ্ট কি?
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ভবিষ্যৎ যদি শুধুমাত্র সামিটের হাতে থেকে যায়, তবে তা দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকার যদি দ্রুত কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ না করে, তবে বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বাধীনতা সত্যিই এক অলীক স্বপ্ন হয়ে উঠবে।
খালেক/
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪