বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আইপিএলে না পাওয়া যেন একটি নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমেও নিলামে সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের মতো তারকাদের নাম থাকলেও তাদের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু কেন এমনটি ঘটছে?
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের আইপিএলে দল না পাওয়ার একটি বড় কারণ হিসেবে অনেকে সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শীতলতার দিকে ইঙ্গিত করছেন। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে টানাপোড়েন আইপিএলেও প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের হিন্দু মহাসভার মতো কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছিল।
অতীতে আইপিএলে সুযোগ পেলেও বেশিরভাগ বাংলাদেশি ক্রিকেটার তাদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যেমন, মোহাম্মদ আশরাফুল ১০ বলে ২ রান করেছিলেন, আর মাশরাফি বিন মুর্তজা একটি ম্যাচের শেষ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ম্যাচ হেরেছিলেন। এমন পারফরম্যান্স দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে আস্থা কমিয়েছে।
তবে মুস্তাফিজ ও সাকিবের ক্ষেত্রে চিত্রটি কিছুটা ভিন্ন। সাকিব আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে দুটি শিরোপা জিতেছেন এবং টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে খ্যাতি কুড়িয়েছেন। অন্যদিকে, মুস্তাফিজুর রহমানও তার প্রথম মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে দলকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন।
আইপিএলে বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ার আরেকটি কারণ বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) অসহযোগিতা। বেশিরভাগ মৌসুমেই আন্তর্জাতিক সূচির কারণে পুরো টুর্নামেন্টের জন্য ক্রিকেটারদের অনাপত্তিপত্র (NOC) দেয় না বিসিবি। উদাহরণস্বরূপ, তাসকিন আহমেদ দুইবার আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়েও বোর্ডের বাধার কারণে খেলতে পারেননি।
আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণের শুরু ২০১০ সালে। সেই মৌসুমে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মাশরাফি বিন মুর্তজা সুযোগ পান। কিন্তু এরপর থেকে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়। ২০২৩ মৌসুমে লিটন দাস দল পেলেও মাত্র কয়েকটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পান এবং সেভাবে নিজের দক্ষতা দেখাতে পারেননি।
এবারের নিলামে ৯২০ কোটি রুপি খরচ করে ১৮২ জন খেলোয়াড় দলে নিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। কিন্তু ৩০ লাখ থেকে ২ কোটি রুপির তালিকায় থাকা কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটারই দল পাননি। এর ফলে আইপিএলের সাথে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ১৪ বছরের সম্পর্ক এবার ছেদ পড়লো।
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মূলত এমন খেলোয়াড়দের চায়, যারা পুরো মৌসুম জুড়ে অংশ নিতে পারবে। কিন্তু বিসিবি বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের জন্য NOC প্রদান করতে কার্পণ্য করে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ব্যস্ত সূচি এবং অতীতের হতাশাজনক পারফরম্যান্স মিলিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
আইপিএলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বন্ধ হওয়া শুধু ক্রিকেট মানসিকতার কারণে নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বোর্ড পরিচালনাগত জটিলতাও। ভবিষ্যতে এই চিত্র পাল্টাবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮