ট্রফি উন্মোচন পর্ব শেষে নিগার সুলতানা ও গ্যাবি লুইসকে শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের গালিচায় ডেকে নিলেন বাংলাদেশ দলের মিডিয়া ম্যানেজার। রুপালি ট্রফি সামনে রেখে দুজনকে পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে ছবির জন্য পোজ দিতে বলা হলো। সেভাবে ছবি তুলতে গিয়ে হেসেই খুন নিগার। এর আগে নিজের জার্সিতে লুইসকে কিছু একটা দেখিয়ে খুব এক চোট হাসলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
টুকরো টুকরো দৃশ্যগুলোতে ফুটে উঠল দারুণ ফুরফুরে ও নির্ভার নিগার। তবে মূল লক্ষ্যে মনোযোগও তার আছে ঠিকই। ওই ট্রফি নিজেদের করে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশ অধিনায়ক।
একই চাওয়া থাকবে আয়ারল্যান্ড অধিনায়কেরও। তবে বাংলাদেশের জন্য সিরিজটির গুরুত্ব একটু বেশিই। আগামী বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার জন্য তিন ম্যাচের এই সিরিজ থেকে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট পাওয়া খুবই জরুরি নিগারদের জন্য।
সেই অভিযানে প্রথম ম্যাচটি বুধবার। মিরপুরে ম্যাচ শুরু সকাল ১০টায়।
আইসিসি উইমেন'স চ্যাম্পিয়নশিপে এখন পর্যন্ত ১৮ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে দশ দলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। বিশ্বকাপে সরাসরি সুযোগ পাবে স্বাগতিক ভারত ও অন্য শীর্ষ ছয় দল।
আয়ারল্যান্ডের পর আগামী জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে আরও তিন ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। সেরা ছয়ে থাকার জন্য এই দুই সিরিজে নিগারদের দরকার অন্তত ৮ পয়েন্ট। তাতেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে না। তবে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিতে পারলে মিলবে নিশ্চয়তা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি ম্যাচ জেতাও হবে খুব কঠিন।
নিগার অবশ্য এখনই দুই সিরিজ নিয়ে ভাবতে চান না। আইরিশদের বিপক্ষে নামার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, একটি করে ম্যাচ ধরে এগোতে চান তারা।
“বিশ্বকাপের চিন্তা অনেক পরে। এখন আমাদের এক-একটি ম্যাচ ধরে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের হাতে এটাসহ দুটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আছে। এখান থেকে পয়েন্ট নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজ ধরে যদি চিন্তা করি, সেটা ভালো হবে। তাই এই পয়েন্টগুলো নেওয়ার দিকে মনোযোগ থাকবে বেশি।”
শক্তি-সামর্থ্য, ঘরের মাঠের কন্ডিশন কিংবা দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যানের বিচারে এই সিরিজে পরিষ্কার ফেবারিট বাংলাদেশ। দুই দলের আগের ছয় লড়াইয়ে তিনটিতে জয়ী বাংলাদশ। আয়ারল্যান্ড জিতেছে একটি। ফল আসেনি বাকি দুই ম্যাচে।
তবে সাত বছরের মধ্যে মুখোমুখি হয়নি দুই দল। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ তারা খেলবে এবারই প্রথম।
সাম্প্রতিক সময়ে আইরিশদের পারফরম্যান্সে উন্নতির ছাপ আছে স্পষ্ট। সবশেষ ছয় ম্যাচের মধ্যে তারা দুইবার হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে, একবার জিতেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
তবে নিগার মনে করিয়ে দিলেন, আইরিশদের ওই সাফল্য ছিল তাদের ঘরের মাঠে। মিরপুরের বাস্তবতা অন্যরকম।
“আয়ারল্যান্ড যেসব ম্যাচ জিতেছে, সবগুলো ঘরের মাঠের কন্ডিশনে জিতেছে। এখানে ওদের তেমন ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। জেতার হার অনেক কম। ওদের সঙ্গে যতবার খেলেছি, আমাদের জয়ের হার অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সিরিজগুলো যদি দেখেন, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া আমরা ভালোই খেলেছি। আর তাদের রেকর্ডটা তাদের মাঠেই।”
“তবে প্রতিপক্ষকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু আমাদের ৬ পয়েন্ট নিতে হবে, খুব গুরুত্বপূর্ণ সিরিজটা। প্রতিটা ম্যাচ মূল্যবান। আমরা চেষ্টা করব দাপট দেখিয়ে খেলতে। আয়ারল্যান্ড আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে নিচে। যদি আমরা তাদের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে খেলতে না পারি, তাহলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে কীভাবে চোখে চোখ রেখে লড়াই করব!”
সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য ওয়ানডের চেয়ে টি-টোয়েন্টিই বেশি খেলেছে বাংলাদেশ। গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর এবারই প্রথম এই সংস্করণে খেলবে বাংলাদেশ।
মাঝের সময়ে শুধু টি-টোয়েন্টি খেললেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার ঘাটতি ছিল প্রকট। পাশাপাশি প্রতি ম্যাচেই ফিল্ডিংয়ের কারণে ভুগতে হয়েছে তাদের। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আয়ারল্যান্ড সিরিজের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরুর আগে থেকেই বেশ লম্বা প্রাক-প্রস্তুতি ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ দল।
সেখানে নিজেদের মধ্যে কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন নিগার, ফারজানা হক, মুর্শিদা খাতুনরা। বাংলাদেশ অধিনায়কের বিশ্বাস, ওসব ম্যাচে ভালো করা ব্যাটাররা সামনের সিরিজেও নিজেদের মেলে ধরবেন।
“ব্যাটিংয়ে প্রস্তুতির জন্য বলব যে, আমরা কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। যেখানে কম-বেশি দল বাছাইয়ের দিকে মনোযোগ ছিল। যে কারণে প্রতিটা ক্রিকেটার নিজের জায়গা থেকে সেরাটা খেলার চেষ্টা করেছে। ওইভাবেই দল ঠিক করা হয়েছে।”
“লম্বা সময় পর আমরা ওয়ানডে খেলব। ঘরের মাঠের কন্ডিশনে আমাদের যেসব ক্রিকেটাররা ধারাবাহিক রান করে, তারা সেসব (প্রস্তুতি) ম্যাচগুলোতে ভালো খেলেছে। তাই আমি দল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।”
গত মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রায় প্রতি ম্যাচেই একাধিক ক্যাচ ছাড়েন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তাই প্রস্তুতি ক্যাম্পে এই দিকটি নিয়ে বাড়তি কাজ করা হয়েছে বলে জানান নিগার।
“গত বিশ্বকাপে আমরা যেই পরিমাণ ক্যাচ ছেড়েছি, ভুগিয়েছে অবশ্যই। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ছেড়েছি। তাই প্রাক-প্রস্তুতি ক্যাম্পে আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ফিল্ডিং ও ফিটনেস নিয়ে কাজ করব। স্কিল নিয়ে তুলনামূলকভাবে অত বেশি সময় দেওয়া হয়নি। ফিল্ডিংয়ের দিকে মনোযোগ ছিল বেশি।”
“ফিল্ডিং ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটা ক্রিকেটারের উন্নতির বিষয়। দলগতভাবে যদি কার্যকরভাবে ভাল করা যায়... কারণ ফিল্ডিংটা মোমেন্টামের বিষয়। যখন একটা মোমেন্টাম চলে আসে, সেটা যদি ধরে রাখা যায় তাহলে ব্যাটিং-বোলিং সহজ হয়ে যায়।”
ব্যাটিং-ফিল্ডিংয়ে উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেওয়া বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য বিশ্বকাপের টিকেট। তবে আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটি নয়। ১৮ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট পাওয়া আইরিশদের কার্যত সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ নেই।
তবে সবশেষ দুই সিরিজে শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি কাজে লাগিয়ে এবার বাংলাদেশকেও হারাতে আত্মবিশ্বাসী আইরিশ অধিনায়ক গ্যাবি লুইস।
“এই সিরিজটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি, বাংলাদেশের বিপক্ষে বিভিন্ন সময় আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলেছি। আবার তাদের মুখোমুখি হতে উন্মুখ। শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া সাফল্য থেকে অনেক আত্মবিশ্বাস পেয়েছি আমরা। এই সিরিজে দাপট দেখাতে প্রস্তুত আমরা।”
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮